হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম, টেকনাফ :

টেকনাফ স্থল বন্দর সংলগ্ন প্রধান সড়কের সারিয়ং ১৪ নং ব্রীজের নিচে ৩০টি বস্তাবন্ধী রোহিঙ্গার লাশ পড়ে আছে মর্মে ১০ সেপ্টেম্বর টেকনাফে খবর ছড়িয়ে পড়ে। সেই সাথে সকাল থেকে মিয়ানমারের উপকুলীয় এলাকায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ড। আগুনের কুন্ডলী টেকনাফ থেকে স্পষ্টই দেখা যায়। পুরো প্রশাসন এবং টেকনাফে কর্মরত এবং টেকনাফের বাহির থেকে রোহিঙ্গাদের খবর সংগ্রহ করতে আসা প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াকর্মীদের মাঝে হুরুস্থুল পড়ে যায়।

১০ সেপ্টেম্বর রবিবার বিকালে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদ হোসেন সিদ্দিক। এরপর উদ্ধারকর্মী এবং উদ্ধারের যাবতীয় সরঞ্জাম, যানবাহনসহ বিশাল বহর নিয়ে উপস্থিত হন টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ মাঈন উদ্দিন খাঁন ও ওসি ওপারেশন শফিউল আলম। সাথে ছিল টেকনাফ পৌরসভার সহকারী কর্মকর্তা মোর্শেদুর রহমানের নেতৃত্বে সুইপার গ্রুপের সদস্যরা। মিয়ানমার বাহিনীর জঘন্যতম বর্বর কান্ড মুসলমানদের কেটে টুকরা টুকরা করে বস্তায় ভরে নাফ নদীতে ফেলে দেয়ার মতো ভয়াবহ ঘটনা প্রত্যক্ষ করতে সংবাদকর্মীগণ তো আছেই। এরপর উপস্থিত হন টেকনাফ পৌরসভার প্যানেল মেয়র সাংবাদিক আবদুল্লাহ মনির। লাশ উদ্ধারের বিশাল আয়োজন। চাট্রিখানি কথা নয়।

ব্রীজের নীচে মুখ বাঁধা ৩০টি বস্তা। একত্রে জড়ো করা নয়। ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। কোন কোন বস্তা ফেটে চুলের মতো বের হয়েছে। হয়ত বস্তায় কোন নারীর লাশ। আহা, কি মর্মান্তিক ! বিকট দুর্গন্ধ। সকলের মধ্যে টান টান উত্তেজনা। চোখে-মুখে বিষাদ। একত্রে ৩০টি বস্তাবন্ধী লাশ। না জানি বস্তার ভেতরে কতটি বণি আদম ? ততক্ষণে মোবাইল ফোন, ফেসবুক আর অনলাইনের বদৌলতে হৃদয় বিদারক ঘটনা প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তি, গণমাধ্যম সংস্থা, গোয়েন্দা সংস্থা থেকে শুরু করে দুনিয়া জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি বিস্তারিত জানতে ঘন ঘন ফোন আসতে থাকে।

যাবতীয় সরঞ্জাম নিয়ে উদ্ধারে নামলেন টেকনাফ পৌরসভার উদ্ধারকর্মীগণ। সে এক অকল্পনীয় দৃশ্য। ব্রীজের উপর দাঁড়ানো সকলের ক্যামেরা সচল। কিন্ত বস্তা খুলে দেখা গেল সবই কুরবানীর পশুর বর্জ। অবশ্য উদ্ধার অভিযানে নামার আগে একজন সাংবাদিক উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জাহিদ হোসেন সিদ্দিক এবং টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ মাঈন উদ্দিন খাঁনকে পরিস্কার করে জোর দিয়েই বলেছিলেন এগুলো মানুষের লাশ নয়, কুরবানীর পশুর বর্জ। কিন্ত তাঁরা অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তা বিশ্বাস করতে পারেননি। অবশেষে তাঁদের উপস্থিতিতে গর্ত কুঁড়ে বস্তাগুলো পুঁতে ফেলা হয়েছে।

বিশ্ব মিডিয়া বঞ্চিথ হলো টেকনাফের একটি ‘টপ নিউজ’ বা দুঃসংবাদ থেকে।